Friday, January 17, 2014

পিএনপিসি পর্ব ২

পিএনপিসি পর্ব ২

যারা আগের পর্বটা পড়েছেন তারা জানেন যে এ হচ্ছে অনলাইন গাঁজাখুরির আরেক নাম। পিএনপিসি যে কি লোমহর্ষক জিনিস সে ব্যাপারে তো আগি বলেছি। তাই বেশী গৌরচন্দ্রিকা না করে সোজা কথায় আসি। এই পর্বের গপ্পোটা হয়তো আমাদের অনেকের চেনা কারণ আমরা যারা সুন্দরী পাড়াতুতো দিদিদের প্রেমকাহীনি নিয়ে এককালে মস্ত লোপ্পা ক্যাচ ক্যাচ খেলতাম, তাদের কাছে এ গল্পের বিষয়বস্তু নেহাতই আমড়াগাছি। ও, আর আগেভাগে বলে নেওয়া ভালো যে ভালো এ গল্পর সব চরিত্র কিন্তু প্রায় কাল্পনিক। কারো বিবাহিত জীবনে ব্যাঘাত ঘটানোর দায় মোটেই আমার নয়।

(Image Courtesy: http://memegenerator.net/instance/43425634)

যা বলছিলাম। আমাদের পাড়ায় এক দিদি ছিলেন, যাকে দেখলে পড়েই আমাদের ওই পাড়ার মোড়ের চাওয়ালা কাকু একটা লেরো বিস্কুট এমনি এমনি খেতে দিতো।হাসিমুখে। ওই যখন আমরা রোজ সকালে স্কুলবাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম আর  ফুলটুসি দি রোজ লেট করে আসতো। বাসের হেল্পার কাকু (বাবুয়া কাকু) কিন্তু রোজ ওর জন্য দাঁড় করিয়ে রাখতো বাসটা। কি রাগই না ধরতো তখন। আমরা কেউ লেট করলে বকাবকি আর রোজ ফুলটুসিদির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। দেতো হাসি দিতো আমরা কেউ বাবুয়া কাকুকে এই নিয়ে কিছু বললেই। একবার তো আমি ভুল করে ফুলটুসি দিদের বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারটা বাবুয়া কাকুকে বলতেই, ৬ টাকার বড়ো আলুকাবলিটা খাইয়েছিল। ভুল করে কারণ, আমাদের পাড়ারই বপি দাদা প্রায় একমাস বাসে জায়নি, আর যাবে কিনা জিজ্ঞেস করতে বাবুয়া কাকু ওর ফোন নাম্বার টা চেয়েছিল ড্রাইভার কাকুর কথামতো। আমায় জিজ্ঞেস করতে আমি গড়গড় করে বলে দিয়ি নাম্বারটা। ওমনি ফুট কেটে সোনাই বলে, আরে ওটা তো ফুলদিদের বাড়ির নাম্বার। বপিদের নাম্বারের শেষে ৫ আর ফুলদিদের ৪। 

আমি ভুল শুধরোব কি, দেখি বাবুয়া কাকুর সে কি হাসি, পুরো শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ টাইপের হাসি। বাবুয়াকাকুর খোয়াবে তখন ও পোসেনজিত আর ফুলটুসি দি ঋতুপর্ণা। যাইহোক, এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, যে এহেন ফুলটুসির দিওয়ানাদের লিস্টটা ইয়া লম্বা। সেখানে এই বাবুয়া কাকু বা চাওয়ালা কাকু আমাদের শ্রেনী বিভাজনের ইতিহাসের মতোই একদম নীচের দিকের কন্টেন্ডার। পাড়ার বড়লোক বাপের বখাটে ছেলে থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিকে র‍্যাঙ্ক করা ছেলে সব্বাই পূজোর সময় ফুলটুসি দির সাথে অঞ্জলি দিতে হেব্বি আগ্রহী। অনেকেই আবার কায়দা মেরে আলাপ জমাতেও চেষ্টা করে। যেমন ওই উচ্চমাধ্যমিকে র‍্যাঙ্ক, আই আই টি টপার ছেলেটি যখন জানতে পারলো যে ক্লাস ১২ এর টেস্ট পরীক্ষায় ফুলটুসি দি ধেড়িয়ে কাত, তখন এগিয়ে গিয়ে বলল-
"হাই ফুলটুসি, আই হার্ড এবাউট ইয়োর র‍্যাজাল্টস ফ্রম আন্টি। ইফ ইউ ওয়ান্ট আই ক্যান হেল্প ইউ আউট"
কথায় আছে সুন্দরী মেয়েদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাদের ন্যাকামো। সে ডিপারটমেন্টে ফুলটুসি দি মোটেই কম ছিলনা। ঘাড় ঘুড়িয়ে জবাব দিল।
"হাই দীপ, প্লিজ ডোন্ট কল মি বাই দ্যাট ঘাস্টলি নেম। কল মি ঝিনুক। মাই গুড নেম।"
অলরেডি ঘায়েল দীপদা সেই মুহূর্ত থেকে মরিশাসের সমুদ্র সৈকতে ফুলটুসি দির সাথে ঝিনুক কোরানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। 
এদিকে বখাটে রাজা দা ও কম যায় না। যতই সে মস্ত ওচাদের নাইট কলেজে পড়ুক, পাড়ায় তার মতো বাইক কারো কাছে ছিল না। আর সরস্বতী পূজোর সময় আমাদের এক গন্ডা বাচ্চা পার্টির কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়ার টাকাও সে একাই দিতো। যেই না শুনলো সে বিদ্যার বহরের কথা, ওমনি সে বাইক হাঁকিয়ে অষ্টমীর দিন পৌছলো ফুলটুসিদির বাড়ির সামনে। নতুন কেনা মোবাইল ফোন টা বের করে (সময়টা ৯০ এর মাঝামাঝি খেয়াল রাখবেন) তাকে ডাকল নীচে। বলল-
"হাই, নলবনে দারুন একটা ডান্ডিয়া পার্টি হচ্ছে, তুমি যাবে আমার সাথে। ৫০০ টাকা করে কাপল পাস।"
"ওয়াও"- ফুলটুসি দির মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে শুধু নলবন কেন, তারা যে তারপর তন্ত্রাও যাবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।

 এই পুরো ঘটনাটা আমার নিজের চোখে দেখা। আমি আর আমার পাড়ার বেস্ট ফ্রেন্ড পঞ্চু বেগুনী খেতে খেতে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিলাম দৃশ্য টা। একটা বেট ও লরে ফেলেছিলাম যে কে জিতবে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু বড়দের নাক গলাতে হল ঠিক তক্ষুনি। পাড়ার সবার জ্যাঠা ভোম্বল জ্যাঠু এসে আমাদের এক খেদানি দিলেন।
"এই যা এখান থেকে। সারাদিন পাকামি করা...আর এই রাজা এসব কি হচ্ছে শুনি। এটা ভদ্রলোকের পাড়া। এক হাত দূরে আমরা বসে আছি দেখতে পাচ্ছিস না। লজ্জা করে না, তোর বাবাকে বলছি দাড়া।"

রাজা দা বা ফুলটুসি দি কি করল জানি না, আমরা দুজন দে ছুট। এতবড় হট নিউজ টা বাড়িতে না বললে চলে। মাইভ ঝাড় খাচ্ছে দুজন দাদা দিদি। পঞ্চুদের বাড়িটা আগে পড়ে। বাড়ি ঢুক্তে না ঢুকতেই শুনি ল্যান্ড ফোনটা বাজছে। মা ই ধরল। তারপরের কথোপকথনের একটা দিকি শুনতে পেলাম-
"কি? কি অবস্থা! কি সাহস ভাবো!"
...
"হ্যা, হবে না কেন... যেমন মা বাবা, তেমনি মেয়ে।"
......
"পাড়াটার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ল। ওই জন্যই তো আগের বার ওর জন্মদিনে যেতে দিয়িনি মেয়েকে।"
......
"আবার ওদিকে আমাকে সেদিন নন্দিনী বলল, দীপ কেও নাচাচ্ছে। কি গেছো মেয়ে"
......
"আর বল কি! ভালো ছেলেটার মাথা চিবিয়ে খেল"
...
"ঠিক বলেছো। মার শাসন নেই। উলটে আস্কারা আছে।"
......
"হ্যাঁ, হ্যা। মনে পড়েছে। ওই সরস্বতী পূজোর দিন তো। দেখেছি। কি পিঠ কাটা ব্লাউজ পড়েছিল না মেয়েটা।"
......
"সত্যি কি ঢলাঢলি। বলি তার দুদিন পড়ে টেস্ট তোর শাড়ি পড়ার দরকারটা কি রে? অতো সাজগোজ।"
......
"উমম! এদের একজনকেও বিয়ে করবে নাকি দেখো...ওর মা তো বলে মেয়ের জন্য এমন জামাই আনবো না দেখো। সবাই হা হয়ে দেখবে।"

আমি বোঝার চেষ্টা করলাম হঠাত বিয়ে কোথা থেকে এল। ততক্ষণে মার ফোন শেষ। আমাকে দেখেই বললেন- "এই তুই ছিলি না তখন...একদম বেশী মিশবি না। ওইসব নলবন টন কিন্তু খুব খারাপ জায়গা।"

মার বকা খেয়ে আবার পূজো মন্ডপে যাচ্ছি। পাড়ার কাকুদের জটলা র সামনেই ছিলাম। শুনতে পেলাম-
"কি আর বলব, বড়দের কোন সম্মান পর্যন্ত করে না।"
"আরে মশাই, মেয়েটার অডাসিটি দেখে তো আমার মাথা ঘুরে জায়...ছেলেটা ডাকল আর তুই ক্লাস টুয়েলভে পড়িস মাত্র...ওমনি ধেই দেই করে নাচতে নাছতে চলে এলি।"

"আরে বোসদা, সেদিন আপনি কি দেখেছিলেন বলুন না। ওই যে সেদিন আমাকে বলছিলেন অটোস্ট্যান্ডে"

"আরে হ্যাঁ ভায়া। আর কি বলব। ওই যে মিত্তির দের ছেলেটা আছে না...তাকে পর্যন্ত ছাড়েনি। আমি সামনে দিয়ে যাচ্ছি কোন হোলদোল নেই। সে কি গল্প দুজনের পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে। আমার গিনী আবার বলল, ও নাকি ফুলটুসি কে কম্পিউটার শেখায়। কি শেখার ছিরি।"

"আরে আমার মেয়েটা বলল ওদের নাকি আবার কি সব পারফিউম সেট দেখিয়েছে। ওই রাজা দিয়েছে মনে হয়।"

"না, বুঝলেন। সেন বাবুকে ডেকে ওনার মেয়ের ব্যাপারে বলা উচিত কিন্তু।" ভোম্বল জ্যাঠু মন্তব্য করলেন।

"আরে ছাড়ুন তো। আমরা কেন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবো। তাদের ব্যাপার তারা বুঝুক। আমরা মজা দেখি।"

কেউ একটা বলে উঠল। খেয়াল নেই কে। সঙ্গে বিশাল হাসির রোল। আমি তখন ভাবছিলাম, কারা যেন বলে পিএনপিসির ব্যাপারে একমাত্র মেয়েদের আধিপত্য?

বলা বাহুল্য সেবারের পূজোর বাকি সবকটা দিন এবং তারপরে আরো অনেক দিন আররো অনেক মশালাদার আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল ফুলটুসি দি। আজ এতোদিন পর ভাবি, কেউ রাজা দার বাবাকে কমপ্লেন করার কথা ভাবল না কেন? ওর বাবা অনেক টাকা দিত পূজোর জন্য বলে? আর দীপ দা? ও আই আই টিতে পড়তো বলে?


No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...