Hisheb Nikesh is one of the very first stories that yours truly took the pains of typing down in Bangla Fonts (Does bangla horof roughly translate to Bangla fonts?) The story was written quite a few days back, a life time now as it seems. Has got a mind boggling number of typos and spelling errors which could not be corrected due to my inability to use the software properly. It's quite disturbing to read something with such stupid errors(for eg.- i don't know how to type the juktakshyors properly or the 'rwi kar' as 'rwi kar' in smriti and likewise properly), but a fellow blogger who quite passionately types in Bangla fonts quite inspired the laziest soul on this planet to publish this one typed many a moons ago. So here it goes. And in case you hate it, find it lachrymose- do let me know. Am sorry if I spoil your bishuddho Bangla mood. Also, in case you like it. please do the needful :-).
“৯ বছর সময়টা একটু বেশীই লম্বা নয় কি?”- প্রশ্নটা আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়েই ফুচকা টা মুখে পুড়ল পারিজাত।
মোহর কুঞ্জের ঠিক বাইরে পসরা সাজিয়ে বসা এই ফুচকাওলাকে খুব পছন্দ পারিজাতের। আগে মাঝে মাঝেই আসত। তখন যখন ও আর সঞ্জয় চুটিয়ে প্রেম করত। এখন অবশ্য আসা হয়না বিশেষ, প্রয়োজনও পড়ে না খুব একটা। সম্পরকটা চুকে বুকে গেছে তাও প্রায় এক বছর হতে চলল।
ফুচকার দামটা কে দেবে তা নিয়ে যথারীতি একটা খুনসুটি বাধল। “কি ভাবছ মাস্টারমশাই, ফুচকা খাইয়েই রেহাই পেয়ে যাবে?” – হেসে উঠল পারিজাত।
সেই হাসি যা তখন থেকে অস্বস্তিতে ফেলছে আকাশকে। খুব সুন্দর বলা যায় কি ওই হাসিটাকে? স্বদেশীনি-বিদেশীনি মিলিয়ে কম বরনময় হাসি দেখেনি সে। তবুও এই হাসিটা যেন আলাদা। ৯ বছর আগের সেই বাচ্চা মেয়েটাও কি ঠিক একইরকম ভাবে হাসত? এরকমই অস্বস্তি হত কি তার?
“তুমি এখানে কেন আসতে চাইলে বল তো?” নীরবতাটা ভাঙল পারিজাতই।
“কেন? মানে ভিক্টোরিয়ার ভেতরকার মিউজিয়াম টা আমার কখনও দেখা হয়নি তাই...আর তা ছাড়া তুমিই তো বলেছিলে কলকাতার এই জায়গাটা তোমার সবথেকে প্রিয়।”
“আমি?কবে বললাম তোমায়?”
“চ্যাটে বলেছিলে। এখন খেয়াল নেই হয়ত”
“বাবারে! তোমার তো ব্যাপক মেমরি”
“মনে না রাখার কোন কারণ নেই পারিজাত। তোমার বায়নাক্কা অনুযায়ী পিটার ক্যাটেই যখন খাওয়াতে হবে, তখন ভাবলাম একটুআগে এখানে আসা যাওয়াই যায়। মনে হল ইউ উইল বি এন ইন্ট্যারেস্টিং কম্পানি”
“ভিক্টোরিয়ায় নিয়ে আগ্রহ এখনও জীবন্ত আছে শুনে ভাল লাগল” ঠোটের কোনে একচিলতে মিঠে রোদ্দুর মিশিয়ে দিল পারিজাত।
“তোমার এরকম কেন মনে হয় বলতো পারিজাত যে আমি আমার বড়ো হওয়া, আমার শহর, আমার ভাললাগা এসব কিছুই ভুলে গেছি।“
“এরকম কোথায় বললাম আমি?” খানিকটা সঙ্কুচিত স্বরেই বলল পারিজাত।
“মুখে হয়ত বলনি কিন্তু তোমার কথায় বোঝা যায়”
“তাই নাকি? অনলাইন চ্যাটে এসব বোঝা যায়?”
প্রশ্নটার উত্তর দেবার সুযোগ পেল না আকাশ। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যালের গেটের কাছে পৌছে টিকিটের লাইনে দাড়াতে হল ওকে। পারিজাত তখন বুড়ির চুল কিনতে ব্যস্ত। ভেতরে ঢুকতেই আকাশের প্রায় তথৈবচ অবস্থা। তার লম্বা অনুপস্থিতিতে এই হুজুগে শহরটার জনসংখ্যা প্রায় দশগুন বেড়ে গেছে নিঃসন্দেহে। খানিকটা বিষন্ন হয়েই পড়ল সে। না করলে পারিজাত আবার কি ভাববে কে জানে।
কিন্তু আবারও অবাক হওয়ার পালা তার। পারিজাতের গলার স্বর অন্য খাতে বইছে এবার- “রনি দা পালাও, দেখেছ কে আসছে? দেখতে পারলেই হয়ে গেল”
আকাশ কিছু ভেবে ওঠবার আগেই তার ডানহাতটা ধরে একছুট দিল পারিজাত। দৌড় থামল ময়দানের সামনে থেকে একটা পারক স্ট্রীট মুখী ট্যাক্সিতে উঠে। প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতেই হেসে উঠল পাড়ার পূজোর মাইক দখল, চেয়ার দখল নিয়ে যুযুধান দুই পক্স।সহজ, সরল, সাবলীল সে হাসি।
ডিসেম্বর মাসের ভারতভ্রমনটা খুব ভাল কাটল আকাশের। অসম্ভব ভাল একটা বন্ধু পেয়েছে সে পারিজাতের মধ্যে। তার সদ্য ষোলোর পারিজাত সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। কথাটা ভেবেই খুব হাসি পেয়েছিম আকাশের। পারিজাত কি কোনদিনি তার ছিল? না কখনও তার হতে পারবে। প্রথম যৌবনের একটা ভাললাগা হিসেবেই থেকে যাবে হয়তো।
জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ নিউ ইয়রক পৌছে পারিজাতকে একটা লম্বা ইমেল করল আকাশ। পৌছ সংবাদ ও অন্যান্য কথা জানিয়ে সব শেষে লিখল- “থ্যাঙ্কস পারিজাত, ফর মেকিং দিস ট্রিপ মেমোরেবল”
উত্তরের অপেখস্মায় রইল সে। দিনে একবার...দুবার...তিনবার মেলবক্স চেক করত আকাশ। কিন্তু পারিজাত উত্তর পাঠায়নি। আকাশ মনে মনে খুব আহত হয়েছিল। একটা মেলের উত্তর লেখার সময় নেই ওর। অনলাইন হয়েও আকাশের চ্যাটের উত্তর দেয়নি ও। ফোন করলে কেটে দিয়েছে লাইনটা। এরকম আচরনের কি কারণ তা আকাশ শত ভেবেও বুঝে উঠতে পারেনি। আসার আগে ওর অত পছন্দের রবীন্দ্র রচনাবলীর সেট উপহার দিতে গেল আকাশ। নিল না ও। খারাপ লাগলেও কিছু বলেনি সে। পারিজাত নিজেও তো কোনো উপহার দেয়নি তাকে- শুধু ওই মনকেমন করা কয়েকটা মূহুরত ছাড়া।
দেখতে দেখতে সময় পেড়িয়ে গিয়ে প্রায় সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। ১৭ ই সেপ্টেম্বর। সকালে অফিস যাওয়ার আগে কিচেন উন্ডোর সামনে দাড়িয়ে নিউ ইয়রকের ধূসর আকাশটাকে দেখছিল আকাশ। অবিরাম ব্রিষ্টি পড়ে চলেছে। নিউ ইয়রকে এরকম ব্রিষ্টি সে আগে কখনও দেখেনি। হঠাত মনে পড়ে যাচ্ছিল বহু দূরে ফেলে আসা একটা শহরের আকাশ- শরত শুরুর আকাশ, বিশ্বকরমা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর স্বচ্ছ নীল আকাশ।
অথচ কি মুষলধারে ব্রিষ্টি পড়ছে এখানে। নিজের মনেই গু্নগুনিয়ে উঠল-
“এমনও দিনে তারে বলা যায়, এমনও ঘন ঘোর বরিষায়...”
আস্তে আস্তেই গাইছিল। মনিকার যাতে ঘুম না ভেঙে যায়। বেচারী কাল সারারাত ডিউটি করেছে।
ভেবে পাচ্ছিল না সে। তার বড় হওয়ার কলকাতা শহরের বুকে ১৭ই সেপ্টেম্বরের সাথে এই গানটার কোনও মিল নেয়। তবুও কোথায় যেন একটা যোগসাজশ রয়েই গেছে। হাতড়াতে হাতড়াতে নিজের মেলবক্স খুলে বসল সে। প্রত্যেকদিন অফিস যাওয়ার আগে একবার করে মেলচেক করে সে। দুনিয়ার অন্যপ্রান্তে যখন সকাল-বিকেলের ভ্রান্তিবিলাস চলছে তখন তাকে কারও মনে পড়ল কিনা একবার চোখ বুলিয়ে নেয় সে।
মেলবক্সে হাজার এক ই-কারড জমা হয়েছে নতুন পুরোনো বন্ধুদের থেকে। শারদীয়ার আগাম অভিনন্দন জানিয়ে। বিশ্বকরমা পুজো মানেই তো উতসবের দামামা বাজা শুরু। এন আর আইরা এগুলো আরো বেশী মনে রাখে। এগুল আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে শেখে হয়তো। মা আরা জামাইবাবুরো একটা মেল এসেছে। রাতে সময় নিয়ে পড়ে উত্তর দিতে হবে বলে মারক করে রাখল সে।
স্ক্রল করে নিচে নামতে গিয়ে থমকে গেল আকাশ। পারিজাতের মেল এসেছে। হঠাত এত দিন বাদে কি মনে করে ঠিক ঠাহর করার আগেই ক্লিক করল সে-
“মাস্টারমশাই,
আজকে আরেকটা বিশ্বকরমা পূজো এসে গেল। আরেকটা ১৭ই সেপ্টেম্বর। আজকেই তোমাকে জানানোর কথা মনে হল। আমি আগামী ২৫এ নভেম্বর বিয়ে করছি। মা বাবাই ঠিক করেছে- ইয়েস! এম গোয়িং ফর এন এরেঞ্জড ম্যারেজ। দেখো আবার বেশী নাক সিঁটকিয়ো না। তুমি তো আর বিয়ে করলে না, আমাকেই হার মেনে নিতে হল। সব সময় জিতেই গেলে তুমি। ১০ বছর আগেও। ১০ বছর পড়েও। ভাল থেকো। কারড মেল করছি। আসার চেষ্টাও কোরো না প্লিজ।
পারিজাত”
আকাশ একদ্রিষ্টে তাকিয়ে আছে কম্পিউটার স্ক্রীনটার দিকে। সামনে তখন জোড়া লেগে যাচ্ছে একের পর এক যোগ বিয়োগের হিসেব।
“শুধুই আঁখি দিয়ে।...আঁখিরো সুধা পিয়ে।...”
এই গানটাই গাইছিল না সেই সদ্য ষোলোর মেয়েটা। ঢাউস হারমোনিয়ামের ওপর ছড়ানো গানের খাতা, সুরসঞ্চারে ব্যস্ত মেয়েটির গলা কি সামান্য কেঁপে উঠেছিল সেদিন। সেদিন যখন মজুমদার কাকু তাঁর মেয়েকে অঙ্ক পড়াতে হবে বলে তাকে ওদের বাড়ি নিয়ে গেছিল। বসার ঘর থেকে সেদিন ছিটকে পালিয়েগেছিল মেয়েটা। যেমন আজও চলে গেল। যেমন এক দশক আগে গেছিল।
মোহর কুঞ্জের বাইরে দাঁড়িয়ে সেদিন তার করা- “তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম যখন তখন কোন টুকুনি ছিলে মনে আছে টুকুন?” প্রশ্নের উত্তরে কি যেন বলেছিল মেয়েটা- “৯ বছর সময়টা একটু বেশীই লম্বা নয় কি?”
মানেটা তখন বোঝেনি আকাশ। গনিতের হিসেবে টুকুন কে তো সে অনেক আগে থেকেই চিনতো। কিন্তু আজকের ১৭ই সেপ্টেম্বরের হিসেবে ধরলে ১০ বছর আগেই কি এই দিনটাতে সে নতুন ভাবে দেখেনি পাড়ার চিরপরিচিত টুকুনকে?- পারিজাত হিসেবে।
অভ্যস্ত ব্যস্তসমস্তটার মধ্যে সে এই দিনটাকেও ভুলেগেছিল। তখন সে খালি ছুটছে সব্বার ঘুড়িকে ভোকাট্টা করে দিয়ে স্বপ্নের দুনিয়ায় পা রাখবার জন্য। ওই দিনটাও যেন কোথায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। স্ম্রিতির কোনায় পারিজাতের শত শত কড়া নাড়ায় সাড়া দেয়নি সেই দিনটা। আর আজ এক দশক আগের সেই সকালটা ফিরে ফিরে আসছে তার সামনে।
অঙ্ক পরীক্সায় ৫ নম্বর ভুল করে এসে গুম হয়ে বসে ছিল স্কুল ড্রেস পড়া একটা মেয়ে। কলেজ ফেরতা আকাশকে বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে দেখে নন্দীনি কাকিমা ডেকে বলেছিল-“রনি একটু বুঝিয়ে দেখ তো”
পড়ার ঘরে ঢুকে আকাশ বলেছিল- “এতো অভিমান করে না পারিজাত”
হাউহাউ করে কেঁদে উঠেছিল মেয়েটা।
আজ যদি অতটা সহজ ভাবে তাকে বলতে পারত আকাশ- “এত অভিমান করে না পারিজাত....”
“৯ বছর সময়টা একটু বেশীই লম্বা নয় কি?”- প্রশ্নটা আকাশের দিকে ছুড়ে দিয়েই ফুচকা টা মুখে পুড়ল পারিজাত।
মোহর কুঞ্জের ঠিক বাইরে পসরা সাজিয়ে বসা এই ফুচকাওলাকে খুব পছন্দ পারিজাতের। আগে মাঝে মাঝেই আসত। তখন যখন ও আর সঞ্জয় চুটিয়ে প্রেম করত। এখন অবশ্য আসা হয়না বিশেষ, প্রয়োজনও পড়ে না খুব একটা। সম্পরকটা চুকে বুকে গেছে তাও প্রায় এক বছর হতে চলল।
ফুচকার দামটা কে দেবে তা নিয়ে যথারীতি একটা খুনসুটি বাধল। “কি ভাবছ মাস্টারমশাই, ফুচকা খাইয়েই রেহাই পেয়ে যাবে?” – হেসে উঠল পারিজাত।
সেই হাসি যা তখন থেকে অস্বস্তিতে ফেলছে আকাশকে। খুব সুন্দর বলা যায় কি ওই হাসিটাকে? স্বদেশীনি-বিদেশীনি মিলিয়ে কম বরনময় হাসি দেখেনি সে। তবুও এই হাসিটা যেন আলাদা। ৯ বছর আগের সেই বাচ্চা মেয়েটাও কি ঠিক একইরকম ভাবে হাসত? এরকমই অস্বস্তি হত কি তার?
“এবার কোথায় যাবেন?” দামটা মিটিয়ে ব্যাগ বন্ধ করতে করতে প্রশ্ন করল পারিজাত।
“তুমি আমাকে এই আপনি আঞ্জে করা বন্ধ করবে?” অভিমানের সুরে বলে উঠল আকাশ।
“তাহলে কি বলব মাস্টারমশাই?”- খিলখিলিয়ে উঠল পারিজাত। আবার সেই হাসি। হাসিটার মধ্যে কি অনেক অভিমান লুকিয়ে আছে? নাকি আকাশকে ব্যঙ্গ করছে হাসিটা?
“যা বলে ডাকতে- রনি দা।”
“যাঃ! আমি তো আপনাকে আগেও মাস্টারমশাই বলেই ডাকতাম। ইংরেজিতে ডাকতাম অবশ্য- স্যার বলতাম।” পারিজাতের হাসিতে এবার একটু দুষ্টুমির ঝিলিক।
“তার অনেক আগে থেকেই তো আমাকে চিনতে- তখন তো রনি দা বলেই ডাকতে।”
“হুম। তা বটে, তবে তা তো ওইরকম ই চিনতাম- আমার পড়শি হিসেবে। যবে থেকে চিনলাম স্যার বলেই ডাকতাম-তাই না?”
“তাই? কবে থেকে চিনলে?”
“আগে বলো তুমি আমাকে কবে থেকে চিনলে?”
“প্রশ্নটা যদিও আমি প্রথমে করেছি-তবুও উত্তর টা আমিই দিচ্ছি – তোমাকে চিনতাম মজুমদার কাকুর মেয়ে হিসেবে। একটা বাচ্চা মেয়ে যে পাড়ায় পূজোর সময় মাইকে কে আগে শারদ শুভেচ্ছা জানাবে তা নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে ঝগড়া করত।”
“বাহ! তুমিও তো ঝগড়া করতে আমাদের সাথে, অত বড় হয়েও।”
“হ্যাঁ, তোমাকে তো দেখতামই পূজো সময়। আরেকবার অবশ্য দেখেছিলাম- আমার বোনের সাথে আঁকার ক্লাসে।”
“হ্যাঁ, কারণ বাকি সময় টা তুমি পড়ার বইয়ে মুখগুজে বসে থাকতে।”
“মোটেও না, কিন্তু এবার তোমার পালা।”
“তোমাকে চিনি...” পারিজাতের চোখের কোনে স্ম্রতিমন্থনের আবেগ-“সেই বিশ্বকরমা পূজোর দিন থেকে”
“ওহ! আমার সেই ঘুড়িওড়ানো”-এবার সত্যিই প্রানখুলে হেসে ফেলল আকাশ। খুব কাছের কোনো জিনিসকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ ছিল হাসিটায়।“জানো আমেরিকায় এই একটা জিনিস খুব মিস করি- ওখানে আকাশ আছে- বসন্তের, হেমন্তের, শীতের- কিন্তু বিশ্বকরমা পূজোও নেই, ঘুড়িও নেই।”
হাসল পারিজাত। সেই হাসি। আবারও।
“জানো রনি দা, ১৭ ই সেপ্টেম্বর দিনটা প্রত্যেক বছর ঘুড়ে ঘুড়ে আসে- কিন্তু সেই সময়টা একবারই এসেছিল- কি যেন বলে সাহিত্যে- সহস্র বছর পেরিয়ে- একবারই।”
“তুমি এরকম রহস্য করে কথা বলা কবে থেকে শিখলে বলো তো? যাদবপুরে ঢুকে নাকি? নাকি এখন অফিসে বসের সাথে বুদ্ধিযুদ্ধ খেলে?” – আকাশ অনেক কৌতূহল মিশিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলল।
“ধ্যাত!”
“না সত্যি, ছোটবেলায় যখন তোমায় পড়াতাম তখন তো এরকম ছিলে না”
“এক্সকিউজ মি- তখন আমি মাধ্যমিক দিচ্ছিলাম-মোটেও বাচ্চা ছিলাম না” পারিজাতের গলায় কপট রাগ।
এবার বেশ মজা হচ্ছিল আকাশের। বাচ্চা মেয়েটা সত্যি বেশ অনেক বড় হয়ে গেছে। একজন আদ্যন্ত রোম্যান্টিক গোছের। সময়টাও তো কম নয়। এই সেদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, আড্ডা, ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশুনার থেকে ঝিল পাড়ে বেশী সময় কাটানো আকাশও কি আজ নিউ ইয়রক নিবাসী আকাশ দত্তর বড্ড অচেনা নয়?
মোহর কুঞ্জের সংলগ্ন রাস্তাটা ধরে ভিক্টোরিয়ার দিকে হাঁটছিল ওরা। শীতের বিকেলে হাল্কা হিমের পরশটা বেশ ভালই লাগছিল। ওদের মাঝখানের প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলা নীরব মাপঝোক টাও বেশ উপভোগ্য। দুজনেই জানে দুজনের মনেয় চলছে অনেক হিসেব নিকেশ- একে অপরকে নিয়ে, কিন্তু যোগ বিয়োগের ফলাফলটা কেউ জানে না।
“তুমি আমাকে এই আপনি আঞ্জে করা বন্ধ করবে?” অভিমানের সুরে বলে উঠল আকাশ।
“তাহলে কি বলব মাস্টারমশাই?”- খিলখিলিয়ে উঠল পারিজাত। আবার সেই হাসি। হাসিটার মধ্যে কি অনেক অভিমান লুকিয়ে আছে? নাকি আকাশকে ব্যঙ্গ করছে হাসিটা?
“যা বলে ডাকতে- রনি দা।”
“যাঃ! আমি তো আপনাকে আগেও মাস্টারমশাই বলেই ডাকতাম। ইংরেজিতে ডাকতাম অবশ্য- স্যার বলতাম।” পারিজাতের হাসিতে এবার একটু দুষ্টুমির ঝিলিক।
“তার অনেক আগে থেকেই তো আমাকে চিনতে- তখন তো রনি দা বলেই ডাকতে।”
“হুম। তা বটে, তবে তা তো ওইরকম ই চিনতাম- আমার পড়শি হিসেবে। যবে থেকে চিনলাম স্যার বলেই ডাকতাম-তাই না?”
“তাই? কবে থেকে চিনলে?”
“আগে বলো তুমি আমাকে কবে থেকে চিনলে?”
“প্রশ্নটা যদিও আমি প্রথমে করেছি-তবুও উত্তর টা আমিই দিচ্ছি – তোমাকে চিনতাম মজুমদার কাকুর মেয়ে হিসেবে। একটা বাচ্চা মেয়ে যে পাড়ায় পূজোর সময় মাইকে কে আগে শারদ শুভেচ্ছা জানাবে তা নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে ঝগড়া করত।”
“বাহ! তুমিও তো ঝগড়া করতে আমাদের সাথে, অত বড় হয়েও।”
“হ্যাঁ, তোমাকে তো দেখতামই পূজো সময়। আরেকবার অবশ্য দেখেছিলাম- আমার বোনের সাথে আঁকার ক্লাসে।”
“হ্যাঁ, কারণ বাকি সময় টা তুমি পড়ার বইয়ে মুখগুজে বসে থাকতে।”
“মোটেও না, কিন্তু এবার তোমার পালা।”
“তোমাকে চিনি...” পারিজাতের চোখের কোনে স্ম্রতিমন্থনের আবেগ-“সেই বিশ্বকরমা পূজোর দিন থেকে”
“ওহ! আমার সেই ঘুড়িওড়ানো”-এবার সত্যিই প্রানখুলে হেসে ফেলল আকাশ। খুব কাছের কোনো জিনিসকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ ছিল হাসিটায়।“জানো আমেরিকায় এই একটা জিনিস খুব মিস করি- ওখানে আকাশ আছে- বসন্তের, হেমন্তের, শীতের- কিন্তু বিশ্বকরমা পূজোও নেই, ঘুড়িও নেই।”
হাসল পারিজাত। সেই হাসি। আবারও।
“জানো রনি দা, ১৭ ই সেপ্টেম্বর দিনটা প্রত্যেক বছর ঘুড়ে ঘুড়ে আসে- কিন্তু সেই সময়টা একবারই এসেছিল- কি যেন বলে সাহিত্যে- সহস্র বছর পেরিয়ে- একবারই।”
“তুমি এরকম রহস্য করে কথা বলা কবে থেকে শিখলে বলো তো? যাদবপুরে ঢুকে নাকি? নাকি এখন অফিসে বসের সাথে বুদ্ধিযুদ্ধ খেলে?” – আকাশ অনেক কৌতূহল মিশিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলল।
“ধ্যাত!”
“না সত্যি, ছোটবেলায় যখন তোমায় পড়াতাম তখন তো এরকম ছিলে না”
“এক্সকিউজ মি- তখন আমি মাধ্যমিক দিচ্ছিলাম-মোটেও বাচ্চা ছিলাম না” পারিজাতের গলায় কপট রাগ।
এবার বেশ মজা হচ্ছিল আকাশের। বাচ্চা মেয়েটা সত্যি বেশ অনেক বড় হয়ে গেছে। একজন আদ্যন্ত রোম্যান্টিক গোছের। সময়টাও তো কম নয়। এই সেদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, আড্ডা, ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশুনার থেকে ঝিল পাড়ে বেশী সময় কাটানো আকাশও কি আজ নিউ ইয়রক নিবাসী আকাশ দত্তর বড্ড অচেনা নয়?
মোহর কুঞ্জের সংলগ্ন রাস্তাটা ধরে ভিক্টোরিয়ার দিকে হাঁটছিল ওরা। শীতের বিকেলে হাল্কা হিমের পরশটা বেশ ভালই লাগছিল। ওদের মাঝখানের প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলা নীরব মাপঝোক টাও বেশ উপভোগ্য। দুজনেই জানে দুজনের মনেয় চলছে অনেক হিসেব নিকেশ- একে অপরকে নিয়ে, কিন্তু যোগ বিয়োগের ফলাফলটা কেউ জানে না।
“তুমি এখানে কেন আসতে চাইলে বল তো?” নীরবতাটা ভাঙল পারিজাতই।
“কেন? মানে ভিক্টোরিয়ার ভেতরকার মিউজিয়াম টা আমার কখনও দেখা হয়নি তাই...আর তা ছাড়া তুমিই তো বলেছিলে কলকাতার এই জায়গাটা তোমার সবথেকে প্রিয়।”
“আমি?কবে বললাম তোমায়?”
“চ্যাটে বলেছিলে। এখন খেয়াল নেই হয়ত”
“বাবারে! তোমার তো ব্যাপক মেমরি”
“মনে না রাখার কোন কারণ নেই পারিজাত। তোমার বায়নাক্কা অনুযায়ী পিটার ক্যাটেই যখন খাওয়াতে হবে, তখন ভাবলাম একটুআগে এখানে আসা যাওয়াই যায়। মনে হল ইউ উইল বি এন ইন্ট্যারেস্টিং কম্পানি”
“ভিক্টোরিয়ায় নিয়ে আগ্রহ এখনও জীবন্ত আছে শুনে ভাল লাগল” ঠোটের কোনে একচিলতে মিঠে রোদ্দুর মিশিয়ে দিল পারিজাত।
“তোমার এরকম কেন মনে হয় বলতো পারিজাত যে আমি আমার বড়ো হওয়া, আমার শহর, আমার ভাললাগা এসব কিছুই ভুলে গেছি।“
“এরকম কোথায় বললাম আমি?” খানিকটা সঙ্কুচিত স্বরেই বলল পারিজাত।
“মুখে হয়ত বলনি কিন্তু তোমার কথায় বোঝা যায়”
“তাই নাকি? অনলাইন চ্যাটে এসব বোঝা যায়?”
প্রশ্নটার উত্তর দেবার সুযোগ পেল না আকাশ। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়্যালের গেটের কাছে পৌছে টিকিটের লাইনে দাড়াতে হল ওকে। পারিজাত তখন বুড়ির চুল কিনতে ব্যস্ত। ভেতরে ঢুকতেই আকাশের প্রায় তথৈবচ অবস্থা। তার লম্বা অনুপস্থিতিতে এই হুজুগে শহরটার জনসংখ্যা প্রায় দশগুন বেড়ে গেছে নিঃসন্দেহে। খানিকটা বিষন্ন হয়েই পড়ল সে। না করলে পারিজাত আবার কি ভাববে কে জানে।
কিন্তু আবারও অবাক হওয়ার পালা তার। পারিজাতের গলার স্বর অন্য খাতে বইছে এবার- “রনি দা পালাও, দেখেছ কে আসছে? দেখতে পারলেই হয়ে গেল”
আকাশ কিছু ভেবে ওঠবার আগেই তার ডানহাতটা ধরে একছুট দিল পারিজাত। দৌড় থামল ময়দানের সামনে থেকে একটা পারক স্ট্রীট মুখী ট্যাক্সিতে উঠে। প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতেই হেসে উঠল পাড়ার পূজোর মাইক দখল, চেয়ার দখল নিয়ে যুযুধান দুই পক্স।সহজ, সরল, সাবলীল সে হাসি।
পিটার ক্যাটে বসে খাবারের অরডার দিয়েই আকাশ বলে উঠল- “যাঃ! আমরা ওইভাবে দৌড়ে এলাম, পাপ্পুদা কি না কি ভাববে। পাড়ায় ঢুকতে না ঢুকতেই না পাকড়াও করে”
“তুমি পাগল হলে? ওখানে দাঁড়ালে আমাদের বিয়ে থেকে হানিমুন সব প্ল্যান করে ফেলত”
“এখনও ওরকমই আছে নাকি?”
“একদম” মুখ টিপে হাসল পারিজাত। পরমূহুরতেই আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল দুজনেই। দুজনেরই চোখের কোনে সুখস্ম্রিতী রোমন্থনের ঝিলিক।
“সেই মনে আছে আমার,” আকাশ অনাবিল হাসছে, “সেই মোড়ের মাথায় আমাদের দুজনকে কথা বলতে দেখে পরের রোববার আড্ডায় আমার যা অবস্থা করেছিল বন্ধুদের সামনে।”
“ও সত্যিই পারেও বটে- এক নম্বরের গসিপমংগার-ওইসময় একদিন ইংলিশ টিউশন থেকে ফেরার সময় বাসে দেখা- কি বলে জানো?”- অরধশতাব্দীর পারিজাতের মুখে ষোলোর কিশোরীর ছায়া।
“কি? ওর সেই প্যাটেন্ট ডায়ালগ- ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস?”
“হ্যাঁ, বলে ভালই হল আমরা একটা নেমন্তন্ন খাব- কি শখ ওর।“
“আমাকে তো পাগলই করে দিয়েছিল খাওয়া খাওয়া করে”
“খাওয়াতে যাবে কেন?”
“ওর যুক্তি ছিল তুই যাদবপুরে চান্স পেলি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আর ফারস্ট ইয়ারে ঢুকতে না ঢুকতেই পাড়ার সব থেকে স্নব মেয়ের সাথে প্রেম করছিস- আর কি চাই?”
“তুমি ওকে বলোনি যে প্রেম না, সেদিন আমি তোমার সাথে দাঁড়িয়ে আবার কবে পড়াতে আসবে তা নিয়ে আলোচনা করচিলাম- আমার প্রি টেস্ট চলছিল তখন মনে হয়। আর আমি স্নব, মোটেও না”
“একটা ভাল বাংলা বলেছিল- কি যেন উন্নাসিক না কি। খুব একটা খারাপ বলেনি বা যদিও। তুমি যা রাগী রাগী চোখে তাকাতে মনে হত এই বোধহয় বকে দিলে। প্রথমবার কোন মাস্টারমশাই ছাত্রীর কাছে বকা খেয়ে যেত মনে হয়”
এবার না হেসে থাকতে পাড়ল না পারিজাত। সে জানত আকাশ কখনও বন্ধুদের আড্ডায় স্বীকার করেনি তার পারিজাতভীতির কথা। সেদিন পাপ্পু দার কাছেও কিছুই খোলসা করে বলেনি। তাকে সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখলে আকাশেরর বন্ধুরা যা হাস্যকর আচরন করতো তা দেখলেই বোঝা যেত যে আকাশের এতে সায় আছে। তবুও কখন বিরক্ত হয়নি পারিজাত। মুখে কপট রাগ দেখিয়েছে হয়ত কিন্তু একান্তে হেসেছে নিজের প্রিয় বন্ধুর সাথে ক্লাসরুমে বা ফোনে গল্প করতে করতে।
“মোটেও সেরকম কিছু না। অঙ্ক আমার মাথায় ঢুকতো না, মুখ গোমড়া করে বোঝার চেষ্টা করতাম সাইন থিটা, কস থিটা”- মুখে বলল পারিজাত। হাসিটা তখন তার অন্যমাত্রায়। আলুকাবলি, দুই বেনীর মুক্ত কৈশরে।
“বাজে বোকো না- তোমায় একবার বলেছিলাম টুকুন তোমার ভাল নামটা খুব সুন্দর- তুমি এমন কটমট করে তাকিয়েছিলে আমার দিকে। আর শুধু পাপ্পু দা কে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই, তোমার সেই বন্ধুটা, নাইসা না কি যেন নাম তার, সেও কম আওয়াজ দিত না কিন্তু তোমায়”
“বেশ মনে আছে তো তোমার দেখছি” পারিজাতের র চোখে এবার দুষ্টুমির পারদ টা চড়ছে, “তুমি আমাকে অঙ্ক শেখাতে আসার আগে আমরা নাইসাকে তোমাকে নিয়ে খেপাতাম”
“যাহ! কেন?”
“লায়ার! ব্লাশ করছ কেন? ক্রিকেট খেলতে গিয়ে সবথেকে বেশী ওর বাড়ির জানলার কাঁচ ভেঙেছ তুমি”
“সেগুলো মোটেও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত নয়” আকাশ এবার দ্রড় চোখে পরবরতী কথাটাকে ভাসিয়ে দিল- “তোমার বাড়ির ছাদটা টারগেট করেই কিন্তু আমার সবথেকে বেশী ছয় মারা”
পারিজাতও কম যায়না। ভাসা, ভাসা চাহনির মধ্যে দুষ্টুমি মিশিয়ে জিগ্যেস করল – “মাস্টারমশাই হওয়ার আগে না পড়ে?”
“যাই বলো, থ্যাঙ্কস টু মজুমদার কাকু, আমি তোমার মতো একটা ভালো ছাত্রী পেয়েছিলাম, আমার জীবনের প্রথম স্টুডেন্ট হিসেবে”
“হ্যাঁ, থ্যাঙ্কস টু বাবা’স চয়েস- আমি মাধ্যমিকে অঙ্কটা ঠিকঠাক উতরে গেছিলাম। নয়তো আমার আগের অঙ্ক স্যারের বদলির পর যা খারাপ অবস্থা হয়েছিল আমার”
“আমরা কে কাকে কমপ্লিমেন্ট দিলাম বলোতো?” দুজনের চোখেই একপ্রশ্ন।
দুজনের চেলো কাবাবের অরডারই তখন টেবিলে। আকাশ খাওয়া শুরু করার মাঝে একঝলক চুরি করে তাকালো পারিজাতের দিকে। তাকাতেই বিস্মিত হয়ে গেল সে। পারিজাত একদ্রষ্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেই চাহনিতে শূণ্যতা নেই, ভয় নেই, কিছুখন আগের দুষ্টুমি নেই- কি আছে সেই চাহনিতে?
“কি হলো ম্যাডাম, খাচ্ছ না যে?”
“বিশ্বকরমা পূজোর দিনটা সত্যিই অন্যরকম ছিল জানো সেবার......”
এরপর এই নিয়ে আর কোনও কথা হয়নি দুজনের মধ্যে। পারিজাতই আলোচনার বিষয়টা ঘুড়িয়ে দিয়েছিল- কবে আকাশ বিয়ে করছে তার ইতালীয় লিভ টুগেদার করা বান্ধবীকে। বাঙালী মতে একটা খাওয়া দাওয়া যেন হয় তা নিয়েও জোর সওয়াল করেছে। আকাশও তেমন বলেছে পারিজাতের আগে বিয়ে করা উচিত। ওর ছবি দেখে নাকি আকাশের কোন জুনিয়র এক্কেবারে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে। চাইলে দুজনের মধ্যে অনলাইন ঘটকালিটা আকাশই করে দেবে। পারিজাত ও বিনা যুদ্ধে না ছাড়িব সূচ্যগ্র মেদিনী মনোভাব দেখিয়ে বলেছে আগে আকাশ বিয়ে করবে তারপর দেখাযাবে।
“তুমি পাগল হলে? ওখানে দাঁড়ালে আমাদের বিয়ে থেকে হানিমুন সব প্ল্যান করে ফেলত”
“এখনও ওরকমই আছে নাকি?”
“একদম” মুখ টিপে হাসল পারিজাত। পরমূহুরতেই আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল দুজনেই। দুজনেরই চোখের কোনে সুখস্ম্রিতী রোমন্থনের ঝিলিক।
“সেই মনে আছে আমার,” আকাশ অনাবিল হাসছে, “সেই মোড়ের মাথায় আমাদের দুজনকে কথা বলতে দেখে পরের রোববার আড্ডায় আমার যা অবস্থা করেছিল বন্ধুদের সামনে।”
“ও সত্যিই পারেও বটে- এক নম্বরের গসিপমংগার-ওইসময় একদিন ইংলিশ টিউশন থেকে ফেরার সময় বাসে দেখা- কি বলে জানো?”- অরধশতাব্দীর পারিজাতের মুখে ষোলোর কিশোরীর ছায়া।
“কি? ওর সেই প্যাটেন্ট ডায়ালগ- ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস?”
“হ্যাঁ, বলে ভালই হল আমরা একটা নেমন্তন্ন খাব- কি শখ ওর।“
“আমাকে তো পাগলই করে দিয়েছিল খাওয়া খাওয়া করে”
“খাওয়াতে যাবে কেন?”
“ওর যুক্তি ছিল তুই যাদবপুরে চান্স পেলি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আর ফারস্ট ইয়ারে ঢুকতে না ঢুকতেই পাড়ার সব থেকে স্নব মেয়ের সাথে প্রেম করছিস- আর কি চাই?”
“তুমি ওকে বলোনি যে প্রেম না, সেদিন আমি তোমার সাথে দাঁড়িয়ে আবার কবে পড়াতে আসবে তা নিয়ে আলোচনা করচিলাম- আমার প্রি টেস্ট চলছিল তখন মনে হয়। আর আমি স্নব, মোটেও না”
“একটা ভাল বাংলা বলেছিল- কি যেন উন্নাসিক না কি। খুব একটা খারাপ বলেনি বা যদিও। তুমি যা রাগী রাগী চোখে তাকাতে মনে হত এই বোধহয় বকে দিলে। প্রথমবার কোন মাস্টারমশাই ছাত্রীর কাছে বকা খেয়ে যেত মনে হয়”
এবার না হেসে থাকতে পাড়ল না পারিজাত। সে জানত আকাশ কখনও বন্ধুদের আড্ডায় স্বীকার করেনি তার পারিজাতভীতির কথা। সেদিন পাপ্পু দার কাছেও কিছুই খোলসা করে বলেনি। তাকে সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে দেখলে আকাশেরর বন্ধুরা যা হাস্যকর আচরন করতো তা দেখলেই বোঝা যেত যে আকাশের এতে সায় আছে। তবুও কখন বিরক্ত হয়নি পারিজাত। মুখে কপট রাগ দেখিয়েছে হয়ত কিন্তু একান্তে হেসেছে নিজের প্রিয় বন্ধুর সাথে ক্লাসরুমে বা ফোনে গল্প করতে করতে।
“মোটেও সেরকম কিছু না। অঙ্ক আমার মাথায় ঢুকতো না, মুখ গোমড়া করে বোঝার চেষ্টা করতাম সাইন থিটা, কস থিটা”- মুখে বলল পারিজাত। হাসিটা তখন তার অন্যমাত্রায়। আলুকাবলি, দুই বেনীর মুক্ত কৈশরে।
“বাজে বোকো না- তোমায় একবার বলেছিলাম টুকুন তোমার ভাল নামটা খুব সুন্দর- তুমি এমন কটমট করে তাকিয়েছিলে আমার দিকে। আর শুধু পাপ্পু দা কে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই, তোমার সেই বন্ধুটা, নাইসা না কি যেন নাম তার, সেও কম আওয়াজ দিত না কিন্তু তোমায়”
“বেশ মনে আছে তো তোমার দেখছি” পারিজাতের র চোখে এবার দুষ্টুমির পারদ টা চড়ছে, “তুমি আমাকে অঙ্ক শেখাতে আসার আগে আমরা নাইসাকে তোমাকে নিয়ে খেপাতাম”
“যাহ! কেন?”
“লায়ার! ব্লাশ করছ কেন? ক্রিকেট খেলতে গিয়ে সবথেকে বেশী ওর বাড়ির জানলার কাঁচ ভেঙেছ তুমি”
“সেগুলো মোটেও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত নয়” আকাশ এবার দ্রড় চোখে পরবরতী কথাটাকে ভাসিয়ে দিল- “তোমার বাড়ির ছাদটা টারগেট করেই কিন্তু আমার সবথেকে বেশী ছয় মারা”
পারিজাতও কম যায়না। ভাসা, ভাসা চাহনির মধ্যে দুষ্টুমি মিশিয়ে জিগ্যেস করল – “মাস্টারমশাই হওয়ার আগে না পড়ে?”
“যাই বলো, থ্যাঙ্কস টু মজুমদার কাকু, আমি তোমার মতো একটা ভালো ছাত্রী পেয়েছিলাম, আমার জীবনের প্রথম স্টুডেন্ট হিসেবে”
“হ্যাঁ, থ্যাঙ্কস টু বাবা’স চয়েস- আমি মাধ্যমিকে অঙ্কটা ঠিকঠাক উতরে গেছিলাম। নয়তো আমার আগের অঙ্ক স্যারের বদলির পর যা খারাপ অবস্থা হয়েছিল আমার”
“আমরা কে কাকে কমপ্লিমেন্ট দিলাম বলোতো?” দুজনের চোখেই একপ্রশ্ন।
দুজনের চেলো কাবাবের অরডারই তখন টেবিলে। আকাশ খাওয়া শুরু করার মাঝে একঝলক চুরি করে তাকালো পারিজাতের দিকে। তাকাতেই বিস্মিত হয়ে গেল সে। পারিজাত একদ্রষ্টে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেই চাহনিতে শূণ্যতা নেই, ভয় নেই, কিছুখন আগের দুষ্টুমি নেই- কি আছে সেই চাহনিতে?
“কি হলো ম্যাডাম, খাচ্ছ না যে?”
“বিশ্বকরমা পূজোর দিনটা সত্যিই অন্যরকম ছিল জানো সেবার......”
এরপর এই নিয়ে আর কোনও কথা হয়নি দুজনের মধ্যে। পারিজাতই আলোচনার বিষয়টা ঘুড়িয়ে দিয়েছিল- কবে আকাশ বিয়ে করছে তার ইতালীয় লিভ টুগেদার করা বান্ধবীকে। বাঙালী মতে একটা খাওয়া দাওয়া যেন হয় তা নিয়েও জোর সওয়াল করেছে। আকাশও তেমন বলেছে পারিজাতের আগে বিয়ে করা উচিত। ওর ছবি দেখে নাকি আকাশের কোন জুনিয়র এক্কেবারে ফ্ল্যাট হয়ে গেছে। চাইলে দুজনের মধ্যে অনলাইন ঘটকালিটা আকাশই করে দেবে। পারিজাত ও বিনা যুদ্ধে না ছাড়িব সূচ্যগ্র মেদিনী মনোভাব দেখিয়ে বলেছে আগে আকাশ বিয়ে করবে তারপর দেখাযাবে।
ডিসেম্বর মাসের ভারতভ্রমনটা খুব ভাল কাটল আকাশের। অসম্ভব ভাল একটা বন্ধু পেয়েছে সে পারিজাতের মধ্যে। তার সদ্য ষোলোর পারিজাত সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। কথাটা ভেবেই খুব হাসি পেয়েছিম আকাশের। পারিজাত কি কোনদিনি তার ছিল? না কখনও তার হতে পারবে। প্রথম যৌবনের একটা ভাললাগা হিসেবেই থেকে যাবে হয়তো।
জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ নিউ ইয়রক পৌছে পারিজাতকে একটা লম্বা ইমেল করল আকাশ। পৌছ সংবাদ ও অন্যান্য কথা জানিয়ে সব শেষে লিখল- “থ্যাঙ্কস পারিজাত, ফর মেকিং দিস ট্রিপ মেমোরেবল”
উত্তরের অপেখস্মায় রইল সে। দিনে একবার...দুবার...তিনবার মেলবক্স চেক করত আকাশ। কিন্তু পারিজাত উত্তর পাঠায়নি। আকাশ মনে মনে খুব আহত হয়েছিল। একটা মেলের উত্তর লেখার সময় নেই ওর। অনলাইন হয়েও আকাশের চ্যাটের উত্তর দেয়নি ও। ফোন করলে কেটে দিয়েছে লাইনটা। এরকম আচরনের কি কারণ তা আকাশ শত ভেবেও বুঝে উঠতে পারেনি। আসার আগে ওর অত পছন্দের রবীন্দ্র রচনাবলীর সেট উপহার দিতে গেল আকাশ। নিল না ও। খারাপ লাগলেও কিছু বলেনি সে। পারিজাত নিজেও তো কোনো উপহার দেয়নি তাকে- শুধু ওই মনকেমন করা কয়েকটা মূহুরত ছাড়া।
দেখতে দেখতে সময় পেড়িয়ে গিয়ে প্রায় সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। ১৭ ই সেপ্টেম্বর। সকালে অফিস যাওয়ার আগে কিচেন উন্ডোর সামনে দাড়িয়ে নিউ ইয়রকের ধূসর আকাশটাকে দেখছিল আকাশ। অবিরাম ব্রিষ্টি পড়ে চলেছে। নিউ ইয়রকে এরকম ব্রিষ্টি সে আগে কখনও দেখেনি। হঠাত মনে পড়ে যাচ্ছিল বহু দূরে ফেলে আসা একটা শহরের আকাশ- শরত শুরুর আকাশ, বিশ্বকরমা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর স্বচ্ছ নীল আকাশ।
অথচ কি মুষলধারে ব্রিষ্টি পড়ছে এখানে। নিজের মনেই গু্নগুনিয়ে উঠল-
“এমনও দিনে তারে বলা যায়, এমনও ঘন ঘোর বরিষায়...”
আস্তে আস্তেই গাইছিল। মনিকার যাতে ঘুম না ভেঙে যায়। বেচারী কাল সারারাত ডিউটি করেছে।
ভেবে পাচ্ছিল না সে। তার বড় হওয়ার কলকাতা শহরের বুকে ১৭ই সেপ্টেম্বরের সাথে এই গানটার কোনও মিল নেয়। তবুও কোথায় যেন একটা যোগসাজশ রয়েই গেছে। হাতড়াতে হাতড়াতে নিজের মেলবক্স খুলে বসল সে। প্রত্যেকদিন অফিস যাওয়ার আগে একবার করে মেলচেক করে সে। দুনিয়ার অন্যপ্রান্তে যখন সকাল-বিকেলের ভ্রান্তিবিলাস চলছে তখন তাকে কারও মনে পড়ল কিনা একবার চোখ বুলিয়ে নেয় সে।
মেলবক্সে হাজার এক ই-কারড জমা হয়েছে নতুন পুরোনো বন্ধুদের থেকে। শারদীয়ার আগাম অভিনন্দন জানিয়ে। বিশ্বকরমা পুজো মানেই তো উতসবের দামামা বাজা শুরু। এন আর আইরা এগুলো আরো বেশী মনে রাখে। এগুল আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে শেখে হয়তো। মা আরা জামাইবাবুরো একটা মেল এসেছে। রাতে সময় নিয়ে পড়ে উত্তর দিতে হবে বলে মারক করে রাখল সে।
স্ক্রল করে নিচে নামতে গিয়ে থমকে গেল আকাশ। পারিজাতের মেল এসেছে। হঠাত এত দিন বাদে কি মনে করে ঠিক ঠাহর করার আগেই ক্লিক করল সে-
“মাস্টারমশাই,
আজকে আরেকটা বিশ্বকরমা পূজো এসে গেল। আরেকটা ১৭ই সেপ্টেম্বর। আজকেই তোমাকে জানানোর কথা মনে হল। আমি আগামী ২৫এ নভেম্বর বিয়ে করছি। মা বাবাই ঠিক করেছে- ইয়েস! এম গোয়িং ফর এন এরেঞ্জড ম্যারেজ। দেখো আবার বেশী নাক সিঁটকিয়ো না। তুমি তো আর বিয়ে করলে না, আমাকেই হার মেনে নিতে হল। সব সময় জিতেই গেলে তুমি। ১০ বছর আগেও। ১০ বছর পড়েও। ভাল থেকো। কারড মেল করছি। আসার চেষ্টাও কোরো না প্লিজ।
পারিজাত”
আকাশ একদ্রিষ্টে তাকিয়ে আছে কম্পিউটার স্ক্রীনটার দিকে। সামনে তখন জোড়া লেগে যাচ্ছে একের পর এক যোগ বিয়োগের হিসেব।
“শুধুই আঁখি দিয়ে।...আঁখিরো সুধা পিয়ে।...”
এই গানটাই গাইছিল না সেই সদ্য ষোলোর মেয়েটা। ঢাউস হারমোনিয়ামের ওপর ছড়ানো গানের খাতা, সুরসঞ্চারে ব্যস্ত মেয়েটির গলা কি সামান্য কেঁপে উঠেছিল সেদিন। সেদিন যখন মজুমদার কাকু তাঁর মেয়েকে অঙ্ক পড়াতে হবে বলে তাকে ওদের বাড়ি নিয়ে গেছিল। বসার ঘর থেকে সেদিন ছিটকে পালিয়েগেছিল মেয়েটা। যেমন আজও চলে গেল। যেমন এক দশক আগে গেছিল।
মোহর কুঞ্জের বাইরে দাঁড়িয়ে সেদিন তার করা- “তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম যখন তখন কোন টুকুনি ছিলে মনে আছে টুকুন?” প্রশ্নের উত্তরে কি যেন বলেছিল মেয়েটা- “৯ বছর সময়টা একটু বেশীই লম্বা নয় কি?”
মানেটা তখন বোঝেনি আকাশ। গনিতের হিসেবে টুকুন কে তো সে অনেক আগে থেকেই চিনতো। কিন্তু আজকের ১৭ই সেপ্টেম্বরের হিসেবে ধরলে ১০ বছর আগেই কি এই দিনটাতে সে নতুন ভাবে দেখেনি পাড়ার চিরপরিচিত টুকুনকে?- পারিজাত হিসেবে।
অভ্যস্ত ব্যস্তসমস্তটার মধ্যে সে এই দিনটাকেও ভুলেগেছিল। তখন সে খালি ছুটছে সব্বার ঘুড়িকে ভোকাট্টা করে দিয়ে স্বপ্নের দুনিয়ায় পা রাখবার জন্য। ওই দিনটাও যেন কোথায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। স্ম্রিতির কোনায় পারিজাতের শত শত কড়া নাড়ায় সাড়া দেয়নি সেই দিনটা। আর আজ এক দশক আগের সেই সকালটা ফিরে ফিরে আসছে তার সামনে।
অঙ্ক পরীক্সায় ৫ নম্বর ভুল করে এসে গুম হয়ে বসে ছিল স্কুল ড্রেস পড়া একটা মেয়ে। কলেজ ফেরতা আকাশকে বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে দেখে নন্দীনি কাকিমা ডেকে বলেছিল-“রনি একটু বুঝিয়ে দেখ তো”
পড়ার ঘরে ঢুকে আকাশ বলেছিল- “এতো অভিমান করে না পারিজাত”
হাউহাউ করে কেঁদে উঠেছিল মেয়েটা।
আজ যদি অতটা সহজ ভাবে তাকে বলতে পারত আকাশ- “এত অভিমান করে না পারিজাত....”
khub-i bhalo laglo poRe. Aamar mone hoy Bangla juktakkhor niye khub beshi chinta na korai bhalo. Amaro somosshya hoy. Tobe ekushey.org/projects/browser_ime/qwerty-phonetic/ display ta amar intuitive lage. Jemon amar naam Anirban type korte hole ao ni r+ba N. Plus sign-diye juktakkhor gulo ektu sohoj-e hoy mone hoy. Tobe lekha je joto kothin sheita aamio bujhi.
ReplyDeleteArekta jinish jeita bhalo laglo sheita holo font-size. Looks good without having to expand on Firefox.
Aaro poRar icchhe roilo. :)
ektu shomoy laglo -kintu bhalo laglo podey...
ReplyDeleteBesh bhalo ... tabe bishwakarma pujoi keno ... saptami r prothom dekha ba swaraswati pujo r aroti r thik ager muhurto gulo ki preme porbar jonnyo purono hoey gelo??
ReplyDeleteSorry sis...for such a late reply...khub bhalo laglo...khub e....d flavour was nyc...
ReplyDelete